২ কিমি দূরের ছোট্ট অক্ষর পড়া যাবে নতুন লেজার প্রযুক্তি আনছেন বিজ্ঞানীরা

চশমা ছাড়া দূরের জিনিস পরিষ্কার দেখা কি আপনার পক্ষে অসম্ভব? ভাবুন তো, যদি খালি চোখে ২ কিলোমিটার দূরে থাকা কোনও বাসের নম্বর বোঝা যায়! কল্পনার মতো মনে হলেও, এমন প্রযুক্তি খুব শিগগিরই বাস্তবে রূপ দিতে চলেছেন চিনের বিজ্ঞানীরা।

চিনা গবেষকেরা এমন এক লেজার প্রযুক্তি তৈরি করছেন, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এর সহায়তায় প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জিনিসও খালি চোখে স্পষ্ট করে দেখতে দেবে। এমনকি মাত্র ৩ মিলিমিটারের অক্ষরও সেই দূরত্ব থেকে পড়া সম্ভব হবে। প্রযুক্তিটি লেজার আলোর উপর ভিত্তি করে কাজ করে — যে বস্তুর উপর আলো ফেলা হবে, সেই আলো প্রতিফলিত হয়ে স্পষ্ট ছবি চোখের সামনে তুলে ধরবে।

এই অত্যাধুনিক লেজার প্রযুক্তি তৈরি করছেন চীনের ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষকেরা। তাঁদের এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ‘ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার’ নামে আন্তর্জাতিক জার্নালে। মূলত মহাকাশের গ্রহ-নক্ষত্র দেখতে ক্ষুদ্র টেলিস্কোপের উন্নত বিকল্প হিসেবে এই লেজার বিম তৈরি করা হচ্ছিল। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, এই প্রযুক্তি পৃথিবীর মাটিতে বহু দূরের দৃশ্য দেখতেও ব্যবহার করা সম্ভব।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, যদি পেন্সিলের শিসের মতো ছোট হরফে লেখা কোনও শব্দের উপর দুই কিলোমিটার দূর থেকে এই লেজার রশ্মি ফেলা হয়, তবে সেটি প্রায় ১৪ গুণ বড় হয়ে চোখে ধরা দেবে। যাঁদের মায়োপিয়া (দূরদৃষ্টি সমস্যায় ভোগেন), তাঁদের জন্য এই প্রযুক্তি বিশেষভাবে কার্যকর হতে পারে। বই পড়া, রাস্তার নাম ও দিকনির্দেশ বোঝার মতো কাজও অনেক দূর থেকে করা যাবে। এমনকি যারা উচ্চ পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করেও দূরের জিনিস পরিষ্কার দেখতে পান না, তাদের জন্য এই প্রযুক্তি হতে পারে এক বড় সমাধান।

আজকের দিনে মানুষের চোখের সমস্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে। দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল, ল্যাপটপ বা ট্যাবের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে শিশু ও তরুণদের মধ্যেই এই সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ মায়োপিয়ায় আক্রান্ত হবেন। এই প্রেক্ষাপটে চিনা বিজ্ঞানীদের এই লেজার প্রযুক্তি ভবিষ্যতে চোখের সমস্যা মোকাবিলায় বড় ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।