ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ বিষয়ে মুখ খুলেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কোনও অন্তর্বর্তী সরকার অন্য রাষ্ট্রের নির্বাচিত সরকারের কাছে কোনও রাজনৈতিক নেতার প্রত্যর্পণ চাইলে, তার সমস্ত আইনি দিকগুলি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
বুধবার এই তথ্য দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা। প্রতিবেদনে আনন্দবাজার বলছে- প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পাঠানো কূটনৈতিক বার্তার ‘আইনি বৈধতা’ কতোটা, খতিয়ে দেখবে নয়াদিল্লি। কোনও অন্তর্বর্তী সরকার অন্য রাষ্ট্রের নির্বাচিত সরকারের কাছে কোনও রাজনৈতিক নেতার প্রত্যর্পণ চাইলে,
তার সমস্ত আইনি দিকগুলি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলেই বিদেশ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের কূটনৈতিক বার্তার (নোট ভার্বাল) উত্তর অবশ্যই দেওয়া হবে ‘যথাসময়ে’। কিন্তু তার জন্য কোনও তাড়াহুড়ো করা হবে না। বিদেশ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সব দিক খতিয়ে দেখে জবাব দিতে কয়েক মাস লাগতে পারে।
নয়াদিল্লির একাংশের বক্তব্য, বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রীর ঢাকা সফরের পরে পরিবেশের যে উন্নতির সম্ভাবনা আশা করা হয়েছিলো, এই ‘নোট ভার্বাল’টি তার সঙ্গে মানানসই নয়। এক কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, ‘ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকুক বা না থাকুক, রাজনৈতিক কারণে আশ্রয় নেওয়া কোনও নেতা বা নেত্রীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফেরত পাঠাতে কোনও দেশ বাধ্য কি না, তার আইনি দিক দেখা হবে। ভারতের তরফে অন্তত ৫০টি প্রত্যর্পণের আবেদন পড়ে রয়েছে ওয়াশিংটনে। গোটা বিশ্ব ধরলে যার সংখ্যা (প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত ভারতীয় অনুরোধ) একশোর বেশি। পাশাপাশি কূটনৈতিক সূত্রে এ কথাও বলা হচ্ছে, ভারত যদি শেখ হাসিনাকে তার জীবননাশের সম্ভাবনার আশঙ্কা সত্ত্বেও (বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি যেমন, তাতে শেখ মুজিবরের হত্যার ইতিহাসকেও ফিরে দেখা হচ্ছে) ফেরত পাঠিয়ে দেয়, তা হলে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ শক্তি হিসাবে তার কূটনৈতিক অবস্থান অনেকটাই লঘু হয়ে যাবে ভুটান, শ্রীলঙ্কা, নেপালের মতো দেশের কাছে।
নয়াদিল্লি সূত্র মনে করছে, বাংলাদেশের বর্তমান সঙ্কটজনক পরিস্থিতি থেকে নজর ঘোরাতে এবং সে দেশের ভারত-বিরোধিতার পালে বাতাস লাগাতেই এই ‘নোট ভার্বাল’ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে দেশের প্রধান শিল্পক্ষেত্র, বস্ত্র কারখানাগুলি থেকে হাজারে হাজারে ছাঁটাই চলছে। বিদেশে রফতানি কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান, বাজারে আগুন দাম। সব মিলিয়ে কোণঠাসা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের স্বার্থেই আওয়ামী লীগ-বিরোধী জাতীয়তাবাদের তাস খেলছে। অন্তর্বর্তী সরকার গত চার মাসে এমন কিছু দিতে পারেনি যাতে বাংলাদেশের মানুষের স্বস্তি মেলে।
বিদেশ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তার কথায়, ‘হাসিনা এখানে যে আশ্রয় চেয়েছেন এবং সেটা যে ভারতের সুপ্রাচীন ‘অতিথি দেবো ভব’ নীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ— এ কথা স্পষ্ট ভাবেই বলে এসেছিলেন বিদেশসচিব। তার সঙ্গে এটাও বলেছিলেন, বাংলাদেশের স্বার্থের কথা ভেবেই ভারত যা করার করতে চায়। বাংলাদেশে আগুন জ্বললে তার ধোঁয়া সবার আগে ভারতের রাজ্যগুলিতেই আসবে। ফলে দু’দেশের স্বার্থেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শান্তিপূর্ণ ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। সে দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার দিকটিকেও মাথায় রাখতে হবে।’ বাংলাদেশের সরকারকে চাপে রাখার উদ্দেশ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় রফতানি বন্ধ করার পথেও যে হাঁটা হবে না, সে কথা বারবার জানিয়েছে সাউথ ব্লক। কারণ, সেই পদক্ষেপ বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থকে ব্যাহত করবে। কালক্রমে তা ভারত-বিরোধিতায় উস্কানি দেবে।
সূত্রের বক্তব্য, ভারতও চায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দ্রুত নির্বাচন সম্পন্ন করুক অন্তর্বর্তী সরকার। বিএনপি-র একাংশ যোগাযোগ রাখছেন ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে।
সবশেষে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিএনপি-ও ইউনূস সরকারের উপর চাপ দিচ্ছে ভোটের জন্য। আপাতত নজর রাখা হচ্ছে, আগামী ২০ জানুয়ারির দিকে। অর্থাৎ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্প বসার পর বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের গতিবিধিতে কিছু পরিবর্তন আসে কি না, তার দিকে। বারবার ভারতের উপর নানা ভাবে চাপ তৈরি করা এবং উগ্র ভারত-বিরোধী আবেগ জিইয়ে রাখার ব্যাপারে পাকিস্তানকে সামনে রেখে চিনের কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Stat News BD – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Stat News BD Offers To Know Latest National And Local Stories.