প্রায় ২০ বছর ধরে সৌদি আরবে ছিলেন তাহের উদ্দিন (৪৫)। দীর্ঘ এই সময়ের আয়-উপার্জন বিভিন্ন সময়ে স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব নম্বরে পাঠিয়েছেন। দেশে পরিবারের সবাই সুন্দরভাবে দিন যাপন করবেন এ জন্যই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের মোট ৮৭ লাখ টাকা স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছেন। সম্প্রতি দেশে ফিরে দেখেন স্ত্রী লাপাত্তা এবং ব্যাংক হিসাবটি ফাঁকা। এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের দেউলডাংরা গ্রামে।
তাহের উদ্দিন ৪ বার অল্প সময়ের জন্য দেশে এসেছেন। এর মধ্যে গত প্রায় ১২ বছর আগে বিয়ে করে ফের কর্মস্থলে চলে যান তিনি। দাম্পত্য জীবনে রয়েছে দুই ছেলে সন্তান।
জানা গেছে, তাহের বিভিন্ন সময়ে স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব নম্বরে পাঠিয়েছেন মোট ৮৭ লাখ টাকা। সম্প্রতি দেশে ফিরে দেখেন স্ত্রী লাপাত্তা এবং ব্যাংক হিসাবটি ফাঁকা। এ ঘটনার পর স্ত্রীর নামে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় কোটি টাকা প্রতারণার মামলা করেন তিনি। মামলায় তানিয়া গত ২০ অক্টোবর ময়মনসিংহ আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।
পরে তদন্তকারী কর্মকর্তার রিমান্ডের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতারক স্ত্রীর একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে ২৮ অক্টোবর আদালতে পাঠানো হয়। এ সময় তার জামিন আবেদন করলে জামিন নামঞ্জুর করে ফের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, তাহের উদ্দিন ২০০৪ সালে সৌদি আরবে যান। সেখানে তিনি একটি কোম্পানিতে চাকরি নেন। আট ঘণ্টা দায়িত্বের পর বাকি সময় তিনি বেশি রোজগারের জন্য গাড়ি পরিষ্কারের কাজ করতেন। একযুগ আগে তিনি দেশে ফিরে বিয়ে করেন পাশের হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের রামেশ্বরপুর গ্রামের মো. বাচ্চু মিয়ার মেয়ে মোছাম্মৎ তানিয়া সুলতানাকে। বিয়ের পর ফের কর্মস্থল সৌদি আরবে চলে যান তিনি।
এ অবস্থায় তাহের উদ্দিন উদ্দিন স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব নম্বরে টাকা পাঠতে থাকেন। চারবার আসা-যাওয়ার মধ্যেই জন্ম নেয় তাদের দুই ছেলে সন্তান। বেশ সুখেই দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি। এর মধ্যে স্ত্রী তানিয়া ছেলেদের নামে জমি ক্রয় ও নিজের গহনার জন্য বাড়তি টাকা দেয়ার দাবি জানালে তাহের স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব নম্বরে বেশ কয়েকবার মোটা অঙ্কের টাকা পাঠান। এরই মধ্যে বাড়ি থেকে তাহেরকে জানানো হয়, তার স্ত্রী তানিয়া হঠাৎ বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
তাহের বিষয়টি নিয়ে তানিয়ার সঙ্গে কথা বললে তিনি সব মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেন। এভাবেই চলতে থাকা অবস্থায় গত সেপ্টেম্বর মাসের ৬ তারিখ তিনি দেশে এসে দেখেন তার স্ত্রী তানিয়া বাড়িতে নেই। দুই সন্তানকে রেখেই তানিয়া লাপাত্তা হয়ে গেছেন। তানিয়ার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করাসহ শ্বশুরবাড়িতে খোঁজ করে তার কোনো সন্ধান করতে পারেননি তাহের। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তানিয়া পালিয়ে গেছেন। যাওয়ার সময় তিনি ৮ ভরি স্বর্ণসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যান। এতে হিসাব করে দেখা যায় নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ মোট এক কোটি ২১ লাখ টাকা নিয়ে যান স্ত্রী।
তাহের উদ্দিন গত ১৯ সেপ্টেম্বর নান্দাইল থানায় তানিয়ার বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলা করেন। মামলায় তানিয়া গত ২০ অক্টোবর ময়মনসিংহ আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সেখানে থাকা অবস্থায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি তানিয়ার বিরুদ্ধে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত একদিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।
থানায় অবস্থান করা অভিযুক্ত তানিয়া জানান, তিনি স্বামীর পাঠানো টাকা দিয়ে দুই ছেলের নামে জমি ক্রয় ছাড়াও ভরণপোষণে ব্যয় করেছেন। তিনি কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি। পরে স্বামী তাকে সন্দেহ করায় নিজ উদ্যোগে তালাক দিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল হাসেম জানান, রিমান্ডে আসামির কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন।
Stat News BD – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Stat News BD Offers To Know Latest National And Local Stories.