বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের কথা ভাবলেই আমাদের মনে এলন মাস্ক, মুকেশ আম্বানি, গৌতম আদানি এবং জেফ বেজোসের মতো নাম ভেসে ওঠে। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র ব্যক্তি কে?
প্রথম নজরে, জেরোম কেরভিয়েলকে প্যারিসের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো একজন সাধারণ মানুষের মতো মনে হতে পারে। তবে, তার গল্পটি সাধারণ নয়! জেরোমের ঘাড়ে এত বড় আর্থিক বোঝা রয়েছে যে তা বিশ্ব বাজারে ধাক্কা দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত, তিনি ‘বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র ব্যক্তি’র খেতাব অর্জন করেন। জেরোমের ঘাড়ে প্রায় ৪.৯৫ লক্ষ কোটি টাকা (প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার)-র দেনা রয়েছে।
১৯৭৭ সালের ১১ জানুয়ারি পন্ট-ল’আবে নামক একটি ছোট ফরাসি শহরে একটি সাধারণ পরিবারে জন্ম জেরোমের। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে বলতে গেলে, জেরোমের মা একজন হেয়ারড্রেসার ছিলেন, আর তাঁর বাবা একজন কামার হিসেবে কাজ করতেন।
জেরোম পড়াশোনায় যথেষ্ট ভাল ছিলেন। তিনি লুমিয়ের ইউনিভার্সিটি লুমিয়ের লিওন ২ থেকে ফিনান্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পড়াশোনা শেষ করার পরেই, তিনি ফ্রান্সের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাঙ্ক সোসাইটি জেনারেলে চাকরি পান। ব্যাঙ্কে তিনি একজন জুনিয়র ডেরিভেটিভস ট্রেডার হিসেবে কাজ করতেন।
তবে, প্রযুক্তি সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান এবং চমৎকার ট্রেডিং দক্ষতা তাঁকে লক্ষ লক্ষ ডলারের লেনদেন পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। তিনি সর্বদা ব্যাঙ্কের ডেল্টা ওয়ান বিভাগের অংশ ছিলেন, যা শেয়ার ট্রেডিং, অ্যালগরিদম এবং বিনিয়োগ নিয়ে কাজ করে।
জেরোমের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এবং ট্রেডিং সিস্টেম সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান ছিল; তবে, তিনি এই জ্ঞান এবং দক্ষতার অপব্যবহার করেছিলেন। জেরোম ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরীণ সিস্টেমের দুর্বলতাগুলির অপব্যবহার করছিলেন।
এই সময়ে তিনি কোম্পানির মূলধন ব্যবহার করে কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা করেছিলেন। প্রথমে, তিনি বিশাল মুনাফা করেছিলেন, প্রতি ক্যালেন্ডার বছরে প্রায় ৭৩ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করেছিলেন।
জেরোম যে প্রযুক্তির ব্যবহার করে প্রতিটি অনিয়ম গোপন করেছিলেন তা ব্যাঙ্ক দীর্ঘদিন জানত। তবে, ২০০৮ সালে জালিয়াতি তীব্র হয়ে ওঠে এবং তদন্ত শুরু হয়। ওই বছর ১৯ জানুয়ারি কেলেঙ্কারিটি প্রকাশ্যে চলে আসে যা হতবাক করে দেয় ব্যাঙ্ক এবং দেশবাসীকে।
বিতর্কের তদন্তের পর জানা যায়, জেরোমের অননুমোদিত লেনদেনের ফলে ব্যাঙ্কের প্রায় ৭.২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। ভারতীয় মুদ্রায় যা ৪,৯৫,০০০ কোটি টাকারও বেশি। এই পরিমাণ ঋণের বোঝা তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষদের একজন করে তুলেছে।
২০১০ সালের দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, তখন ৩৩ বছর বয়সী জেরোম কেরভিয়েলকে বিশ্বাসভঙ্গ, কম্পিউটারের অপব্যবহার এবং জালিয়াতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
বিচারক তাঁকে সোসাইটি জেনারেলকে ৪.৯ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৪.২ বিলিয়ন পাউন্ড) ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে তাঁর ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেডিং কৌশলের কারণে ব্যাঙ্কটি মোট যে পরিমাণ টাকা হারিয়েছিল। এরপর জেরোমকে ২০১৫ সালে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তার সাজা শেষ হলেও, ঋণের বোঝা আজও রয়ে গেছে। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর, জেরোম সরল জীবনযাপন করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু ঋণের বোঝা এখনও তাকে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষদের একজন করে রেখেছে।