ঠাকুরগাঁওয়ে চার সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন জান্নাত বেগম নামের এক মা। শিশুসন্তানদের লোহার খাঁচায় করছেন লালনপালন। চিকিৎসা আর খরচ জোটাতে প্রতিনিয়ত করছেন সংগ্রাম। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শিশুদের ভবিষ্যৎ।
gnewsদৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
খরচ জোগাড় করতে লোহার তৈরি খাঁচার মতো ঠেলাগাড়িতে তিন যমজ শিশুসন্তানকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। তার পাশে হাঁটে সাড়ে তিন বছর বয়সী আরেক শিশুসন্তান। চার শিশুসন্তানকে নিয়ে এমন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই কাটছে মা জান্নাত বেগমের জীবন।
জানা গেছে, জান্নাত বেগম ময়মনসিংহ জেলার মেয়ে। পাঁচ বছর আগে প্রেমের সম্পর্কের পর ঢাকায় বিয়ে হয় হাবিল নামের এক যুবকের সঙ্গে। বিয়ের পর তারা ঠাকুরগাঁওয়ে এসে বসবাস শুরু করেন। এক বছর পর কোলজুড়ে আসে মেয়ে সন্তান। পরের বছর আরও তিন যমজ সন্তান। চার সন্তান রেখে ছেড়ে যান স্বামী। নিরুপায় হয়ে পড়েন জান্নাত। শুরু হয় সংগ্রামী জীবন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বদ্বেশরী সরকারি আশ্রয়ণের ঘরে থাকতেন জান্নাত আক্তার। স্বামী চলে যাওয়ায় হারিয়ে ফেলেন কূলকিনারা। প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশুরা। বাধ্য হয়ে চলে আসেন শহরের পরিষদ পাড়ায়। আশ্রয় নেন ভাড়া বাড়িতে।
কাজ খুঁজে বের করতে গিয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায় শিশুদের দায়িত্ব ও তাদের রেখে বাইরে গিয়ে উপার্জনের কোনো সুযোগ তার হাতে ছিল না। শেষ পর্যন্ত সন্তানদের ক্ষুধা নিবারণে বের করে আনেন এক অভিনব উপায়। নিজ উদ্যোগে স্থানীয় এক কামারের দোকানে চাকা লাগানো লোহার খাঁচা বানিয়ে নেন ৭ হাজার টাকা খরচে। সেই খাঁচায় বসিয়ে দেন তিন যমজ শিশুকে, আর পাশে হাঁটে বড় সন্তান মরিয়ম। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে সাহায্য তোলেন তিনি।
জান্নাত বেগম বলেন, আমি সাহায্য তুলে দিন পার করি, এটা নিশ্চয়ই লজ্জার। কিন্তু আমার কোনো উপায় নেই। সন্তানদের ক্ষুধার্ত মুখ আমি দেখতে পারি না। অনেকে আমার সন্তানদের কিনে নেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে, লাখ লাখ টাকা দিতে চেয়েছে। কিন্তু সন্তানের প্রতি মায়া কখনোই টাকার কাছে হার মানেনি।
তিনি আরও বলেন, আয় খুব সীমিত। তাই শিশুদের পর্যাপ্ত খাবার কিংবা পুষ্টিকর কিছু খাওয়াতে পারেন না। অনেক সময় তারা পেট ভরে খেতেও পায় না।
জান্নাতের দুর্দশা দেখে ব্যথিত প্রতিবেশী শ্যামল। তিনি বলেন, একজন নারীর পক্ষে এত ছোট চারটি সন্তান লালনপালন করা কঠিন। কিন্তু জান্নাত তাদের মানুষ করার পাশাপাশি রাস্তায় নেমে উপার্জনের চেষ্টা করছেন। তিনি সত্যিই সংগ্রামী।
আরেক প্রতিবেশী শারমিন বলেন, ওদের কান্নার শব্দ শুনে মনটা কেঁদে ওঠে। কী অমানবিক জীবন যাপন করছে তারা। অথচ সমাজের ধনী মানুষরা অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য করেন; কিন্তু জান্নাতের পাশে সেভাবে কেউ এগিয়ে আসেনি।
ঠাকুরগাঁও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, বিষয়টি আগে জানা ছিল না। খোঁজখবর নিয়ে ও জানার পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষে বিকেলে তাকে তাকে কিছু শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তিনি সম্ভবত অন্যের বাসায় ভাড়া থাকেন। তিনি চাইলে থাকার জন্য আমরা তাকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর প্রদান করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, তিনি যদি চান ভিক্ষাবৃত্তি বাদ দিয়ে কোনো সম্মানজনক পেশায় আসতে চান তাহলে আমরা সরকারিভাবে তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ও ঋণের ব্যবস্থা করে দিতে পারি। তা ছাড়া পরিস্থিতি বিবেচনায় যতটা সম্ভব প্রশাসন তার পাশে থাকার চেষ্টা করবে।
Stat News BD – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Stat News BD Offers To Know Latest National And Local Stories.